সমস্ত বঙ্গোপসারের উচ্ছ্বাস থেমে যায় যেন;
মাইলের পর মাইল মৃত্তিকা নীরব হ‘য়ে থাকে৷
কে যেন বলে :
আমি যদি সেই সব কপাট স্পর্শ করতে পারতাম
তাহ‘লে এই রকম গভীর নিস্তব্ধ রাতে স্পর্শ করতাম গিয়ে৷
আমার কাঁধের উপর ঝাপসা হাত রেখে ধীরে, ধীরে আমাকে জাগিয়ে দিয়ে৷
চোখ তুলে আমি
দুই স্তর অন্ধকারের ভিতর ধূসর মেঘের মতো প্রবেশ করলাম :
সেই মুখের ভিতরে প্রবেশ করলাম৷
রাতের নক্ষত্র, তুমি বলো দেখি কোন্ পথে যাবো?
‘তোমারি নিজের ঘরে চ‘লে যাও‘ – বলিল নক্ষত্র চুপে হেসে
‘অথবা ঘাসের‘ পরে শুয়ে থাকো আমার মুখের রূপ ঠায় ভালোবেসে;
অথবা তাকায়ে দ্যাখো গরুর গাড়িটি ধীরে চ‘লে যায় অন্ধকারে
সোনালী খড়ের বোঝা বুকে;
পিছে তার সাপের খোলশ, নালা, খলখল অন্ধকার – শান্তি তার
রয়েছে সমুখে;
কিন্তু সেই শুভ রাষ্ট্র ঢের দূরে আজ
চারিদিকে বিকলাঙ্গ অন্ধ ভিড় — অলীক প্রয়ান।
মন্বন্তর শেষ হলে পুণরায় নব মন্বন্তর;
যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলে নতুন যুদ্ধের নান্দীরোল;
মানুষের লালসার শেষ নেই;
উত্তেজনা ছাড়া কোনো দিন ঋতুক্ষণ
অবৈধ সঙ্গম ছাড়া সুখ
অপরের মুখ ম্লান করে দেওয়া ছাড়া প্রিয় সাধ নেই।
কেবলি আসন থেকে বড়ো, নবতর
সিংহাসনে যাওয়া ছাড়া গতি নেই কোনো।
মানুষের দু:খ কষ্ট মিথ্যা নিষ্ফলতা বেড়ে যায়৷
…
এতো আগুন এতো রক্ত মধ্যযুগ দেখেছে কখনো?
…
তবুও সকল কাল শতাব্দীকে হিসেব নিকেশ ক’রে আজ
শুভ কাজ সূচনার আগে এই পৃথিবীর মানব হৃদয়
স্নিগ্ধ হয় — বীত শোক হয় ?
মানুষের মৃত্যু হলে তবুও মানব
থেকে যায়; অতীতের থেকে উঠে এসে আজকের মানুষের কাছে
প্রথমত চেতনার পরিমাপ নিতে আসে।
তবু রোজ রাতে আমি চেয়ে দেখি, আহা,
থুর থুরে অন্ধ প্যাচা অশ্বথের ডালে বসে এসে,
চোখ পাল্টায়ে কয় : ‘বুড়ি চাদ গেছে বুঝি বেনোজলে ভেসে?
হে প্রগাঢ় পিতামহী আজো চমত্কার?
আমি ও তোমার মতো বুড়ো হবো_ বুড়ি চাদটারে আমি
ক’রে দেবো _ কালীদহে বেনোজলে পার;
আমরা দু’জনে মিলে শূন্য ক’রে চ’লে যাবো জীবনের প্রচুর ভাড়ার৷
যেন কোন ব্যাথা নাই পৃথিবীতে, _ আমি কেন তবে মৃত্যু খুজি?
‘কেন মৃত্যু খুজো তুমি? চাপা ঠোটে বলে দূর কৌতুকী আকাশ৷
ঝাউফলে ঘাস ভ’রে _ এখানে ঝাউয়ের নিচে শুয়ে আছি ঘাসের উপরে;
কাশ আর চোরকঁাটা ছেড়ে দিয়ে ফড়িং চলিয়া গেছে ঘরে৷
সন্ধ্যার নক্ষত্র, তুমি বলো দেখি কোন পথে কোন ঘরে যাবো!
কোথায় উদ্যম নাই, কোথায় আবেগ নাই, _ চিন্তা স্বপ্নন্ ভুলে গিয়ে
শান্তি আমি পাবো?
পিরামিড ও এ্যাটম আগুন অধীর প্রণনার
উত্সারিত রাষ্ট্র সমাজ শক্তির রচনায়
প্ল্যান কমিশন কনফারেন্সের বৃহত্ প্রাসাদে
হঠাত্ মহাসরীসৃপকে দেখা যায়৷
নিরন্তর বহমান সময়ের থেকে খসে গিয়ে
সময়ের জালে আমি জড়িয়ে পড়েছি৷
‘মানুষের মনে দীপ্তি আছে,
তাই রোজ নক্ষত্র ও সূর্য মধুর–
এ-রকম কথা যেন শোনা যেত কোনো একদিন
আজ সেই বক্তা ঢের দূর…
সমস্ত সন্দেহ থেকে হৃদয়কে সরিয়ে এবার
শান্ত স্থির পরিস্কার করে
চেয়ে দেখি মাছরাঙা সূর্য নিভে গেছে;
অন্য প্রেমিককে পাবে অন্য এক ভোরে৷
দেখেছি প্রেমিক গণিকাদের নিকট থেকে ঋণ
খাচ্ছে শুধু, অনেক মহত্ মর্ম রীতি প্রতিশ্রুতিময়
হতে দেখে বুঝেছি তবু সত্য আছে অন্য অর্থময়;
আশার, ভালোবাসার, সেবার, জানার;
এছাড়া আর কি সত্য ইতিহাস জানে?
তিমিরবিলাসী না তিমিরবিনাশী না তিমিরপিপাসী? 
জবাব